সরকারে পরিবর্তন আসছে বলে দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনেকেই জানতে চান আমার মুখে সব সময় হাসি থাকে কেন? কারণ, আমি দেখতে পাচ্ছি, জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্যদিয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকার সরে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এই সরকারের পতন দেখতে চায়। আপনারা (দলীয় নেতাকর্মী) নিশ্চিত থাকুন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন আসবে। সত্যের জয় হবে, সুন্দরের জয় হবে, গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাআল্লাহ। গতকাল দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার ‘ফেলে দেয়ার’ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণকে, বিএনপি বিশ্বাস করে মানুষের শক্তিকে; বিএনপি’র যে রাজনীতি, গণতন্ত্রের রাজনীতি, সেই রাজনীতি আজকে সমগ্র আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।

আজকে সেই কারণে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এক বাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, সরকারের পতন চায় এবং তারা সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়। সিলেটের কুলাউড়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে আর বিদেশিদের ‘জুজুর’ ভয় দেখাতে ‘সরকার জঙ্গি নাটক করছে’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার কূটকৌশলী। হঠাৎ কুলাউড়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। হঠাৎ করে এত বিস্ফোরক কোথা থেকে এলো, কারা আনলো, কীভাবে আনলো? যখনই আন্দোলন তুঙ্গে থাকে, তখনই এই জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা বিশ্বকে জুজুর ভয় দেখাবে যে- দেখো আমরা না থাকলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নাটক করতে করতে সরকার এই জায়গায় এসেছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঘরে ঘুমাতে পারেন না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তারাও রেহাই পাচ্ছেন না। বিএনপি’র কর্মীকে না পেলে তার বাবা, ভাইকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে এমন হতেই থাকবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের একটাই দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন। আওয়ামী লীগ জানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দিলে তারা শতকরা ১০টি আসনও পাবে না। এই একটাই কারণ- তাদের কোনো কথাই শুনতে না চাওয়ার। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কোনো ‘ভাবান্তর নেই’ বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে প্রতিদিন ১০-১২ জন মারা যাচ্ছেন। কারাগারে শোয়ার মতো করে হাসপাতালের মেঝেতে শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। সরকার এত মেগা উন্নয়নের কথা বলে, তাহলে এমন পরিস্থিতি কেন? জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। সভায় ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমানের অবদান নিয়ে আলোচনা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আরাফাত রহমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। সব কিছুকে রাজনৈতিকভাবে দেখার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

যোগ্যতা থাকা ব্যক্তিও বঞ্চিত হন। আরাফাত রহমানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আবদুস সালাম। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ক্রীড়াঙ্গনে দলাদলি করেনি। এখন শুধু ক্রীড়াঙ্গনে না, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্থিরতা চলছে। ক্রীড়াঙ্গনে ক্রীড়াবিদদের উচ্ছিষ্টে পরিণত করা হয়েছে। দুর্নীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ক্যাসিনো বাণিজ্য করে ক্লাবগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পালের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক শরীফুল আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি মঞ্জুর হোসেন মালু, বিসিবি’র সাবেক পরিচালক আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, ক্রীড়াবিদ শাহ আলম, ক্রীড়া সাংবাদিক নাসিমুল হাসান দোদুল ও মোজাম্মেল হক চঞ্চল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সুত্রঃ মানবজমিন